রাঙ্গুনিয়ার অন্যতম ব্যস্ত সড়ক যেন এখন অবৈধ কাঠ পাচারের নিরাপদ করিডোরে পরিণত হয়েছে। দিন–রাত অবিরাম ছুটে চলা দ্রুতগতির অবৈধ ‘চাঁদের গাড়ি’তে করে পাচার হচ্ছে বনের মূল্যবান কাঠ। এসব কাঠের বড় একটি অংশ ব্যবহৃত হচ্ছে এলাকার অবৈধ ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে, যা পরিবেশ ধ্বংসের নতুন মাত্রা যোগ করছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বনবিভাগের চোখের সামনেই এই পাচার কার্যক্রম চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং অভিযোগ উঠেছে, নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে পাচারকারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে পোমরা বনবিভাগ ফাঁড়ির চেকপোস্টে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে দরকষাকষির মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
জানা গেছে, মূল্যবান সেগুন কাঠ, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বাঁশ এমনকি কাঠের আসবাবপত্রও কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এই চেকপোস্ট অতিক্রম করছে। মাঝে মধ্যে দু–একটি কাঠবোঝাই গাড়ি আটক করা হলেও তা লোক দেখানো অভিযান বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। কারণ রাতের অন্ধকার নামলেই শত শত অবৈধ কাঠের গাড়ি অনায়াসে সড়ক পার হয়ে যায়।
এই অবৈধ চাঁদের গাড়িগুলো শুধু বন উজাড়ের জন্যই দায়ী নয়, সড়কে প্রাণহানির ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলেছে। দ্রুতগতির এসব গাড়ির ধাক্কায় রাঙ্গুনিয়ায় একাধিকবার প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কয়েক বছর আগে একজন সাংবাদিকও এমন একটি অবৈধ কাঠবোঝাই চাঁদের গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন যা এখনো এলাকাবাসীর মনে গভীর ক্ষত হয়ে আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান বলেন, “আর কোনো অবৈধ কাঠ পাচার করতে দেওয়া হবে না। মাসোহারার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
তবে স্থানীয়দের দাবি, মাসোহারার বিষয়টি এখন আর গোপন নয় বরং অনেকটা প্রকাশ্যেই আদায় করা হয়। বনবিভাগের নিরব ভূমিকার সুযোগে একদিকে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল, অন্যদিকে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।
এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের দাবি, অবৈধ কাঠ পাচার, চাঁদের গাড়ির দৌরাত্ম্য এবং বনবিভাগের কথিত নিরবতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। একই সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
নেজাম উদ্দীন/এসআর