হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দালালচক্র, লাগেজ চুরি এবং যাত্রী হয়রানির মতো দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো নিরসনে এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছেন নবনিযুক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওশাদ খান। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি ধারাবাহিক অভিযান, তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং উদ্ভাবনী পদক্ষেপের মাধ্যমে বিমানবন্দরে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার এই বলিষ্ঠ ভূমিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং সাধারণ যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
বিমানবন্দরে জনসমাগম এবং সেখানে ঘটা অনিয়মগুলো সরাসরি তদারকি করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নওশাদ খানকে স্কুটারে চড়ে টার্মিনালের বিভিন্ন অংশ ঘুরে পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। এই ব্যতিক্রমী পদ্ধতি তাকে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে এবং দালাল, লাগেজ কাটা চক্র এবং যাত্রী হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক জরিমানা ও আইনি ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করছে। তার এসব কার্যক্রমের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রবাসীসহ সাধারণ যাত্রীরা স্বস্তি ও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরে চলমান হয়রানি ও অনিয়ম বন্ধে এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি ছিল।
নিয়োগ পাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট নওশাদ খান বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যা যাত্রী হয়রানি রোধে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
* ক্যান্টিনে অতিরিক্ত দামে ও বাসি খাবার বিক্রি বন্ধ:যাত্রীদের মানসম্মত ও ন্যায্য মূল্যের খাবার নিশ্চিত করতে ক্যান্টিনগুলোর ওপর কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।
* ওয়াশরুমের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বকশিসের নামে যাত্রী হয়রানি রোধ: ওয়াশরুম ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বকশিসের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
* কার্যকর হেল্প ডেস্ক চালু:যাত্রীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা প্রদানের জন্য একটি কার্যকর হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে।
* সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা:জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরা যাতে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সবচেয়ে আলোচিত উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি হলো লাগেজ রিলিজকারী কর্মীদের শরীরে ক্যামেরা সংযুক্ত করা। জানা গেছে, এসব ক্যামেরার ফুটেজের নিয়ন্ত্রণ থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেই। এই পদক্ষেপের ফলে লাগেজ চুরি এবং সংশ্লিষ্ট অনিয়ম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে যাত্রীরা আশা করছেন। এটি একদিকে যেমন কর্মীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে, তেমনি যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্র হারানোর ভয়ও কমাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ম্যাজিস্ট্রেট নওশাদ খানের এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে শাহজালাল বিমানবন্দরে দুর্নীতি ও প্রবাসীদের হয়রানি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ ও স্বপ্ন যেন আর অনিয়মের শিকার না হয় এমন প্রত্যাশাই এখন সবার। তার এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ বিমানবন্দরে একটি স্বচ্ছ ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ম্যাজিস্ট্রেট নওশাদ খানের এই সাহসী পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে বিমানবন্দরে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। তার এই নিরলস প্রচেষ্টা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই লড়াই অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করা যায়।
ম্যাজিস্ট্রেট নওশাদ খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এসব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিল যাত্রীদের, তাই আমি এবার কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করছি। যেটুকু আমার দায়িত্ব, আমি নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি এবং আগামীতেও করে যাবো।’
এসএম