বারান্দায় সহজে বেড়ে ওঠে পুদিনাগাছ। অনেকে বোতলে রাখেন, তাতেও দিব্যি বেড়ে উঠে। আর বাজারে তো হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। এই সহজলভ্য পুদিনাপাতা শরীরের জন্য খুব উপকারী। পানীয় কিংবা সালাদে চমৎকার সুগন্ধ নিয়ে আসে পুদিনা। খাবারে সুগন্ধ যোগ করার পাশাপাশি পুষ্টিরও জোগান দেয় উপকারী এই ভেষজ। এছাড়া পুদিনার তেল মাথা ব্যথার মতো সমস্যা কমাতে কার্যকরী। ত্বকের যত্নেও নানাভাবে ব্যবহার করা যায় পুদিনা। জেনে নিন পুদিনার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
পুদিনাপাতার শরবত শরীর ঠান্ডা রাখে, এর চা বাড়ায় হজমশক্তি। তাহলে জেনে নেওয়া যাক পুদিনাপাতার বহুবিদ ব্যবহার ও উপকারিতার কথা।
১) শরীর সতেজ রাখে: শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হতে দেয় না পুদিনাপাতা। তাই গরমে পুদিনাপাতা ভেজানো পানি খেলে উপকার পাবেন। শরবতেও যোগ করতে পারেন।
২) হজমের গোলমাল ঠেকাতে: হজমজনিত সমস্যা কমবেশি সবারই মাঝেমধ্যে হয়। স্বস্তি পেতে ওষুধের বিকল্প হতে পারে পুদিনাপাতা। পুদিনায় আছে মেনথল, যা হজমশক্তি বাড়ায়। শুধু তা–ই নয়, পেটের অন্যান্য সমস্যারও অবসান ঘটায় পুদিনা।
৩) মাথাব্যথায়: পিপারমিন্ট বা পুদিনার সক্রিয় উপাদান হলো মেন্থল। উপাদানটি মাইগ্রেনের মাথা ব্যথা কমাতে পারে। পুদিনাপাতায় থাকা মেনথল পেশি শিথিল করায় বলে ব্যথা কমে। গরমে মাথা ব্যথা হলে কয়েকটা পুদিনা পাতা পানিতে ফুটিয়ে বাষ্প টেনে নিন। মলম ব্যবহার করতে না চাইলে সরাসরি পুদিনাপাতার রস কপালে মাখলেও মাথাব্যথা কমে। এটি অন্যান্য উপসর্গ যেমন হালকা সংবেদনশীলতা, বমি বমি ভাব এবং বমি কমাতে পারে।
৪) চুলকানির মতো অ্যালার্জি: পুদিনায় রোম্যারিনিক অ্যাসিড নামে একটি যৌগ রয়েছে যা শরীরের হিস্টামিন প্রতিক্রিয়া কমাতে পারে। এতে হাঁচি এবং চুলকানির মতো অ্যালার্জির লক্ষণ কমে।
৫) মানসিক শান্তি: সুগন্ধিভিত্তিক চিকিৎসায় পুদিনাপাতা প্রথম সারির উপাদান। এর কড়া সুগন্ধ মানসিক চাপ, হতাশা দূর করে শরীরকে চনমনে করে তোলে। রক্তে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষমতা সক্রিয় করে। আবার পুদিনাপাতার এসেনশিয়াল অয়েলের ঘ্রাণ তাৎক্ষণিকভাবে রক্তে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনও মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা কমায়।
৬) রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়: পুদিনা পাতায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা রোগের জীবাণুকে সহজে শরীরে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয় না। ধারাবাহিকভাবে পুদিনাপাতা মেশানো পানি খেলে উপকার পাবেন।
৭) শ্বাসকষ্টে আরাম: নিয়মিত পুদিনাপাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে বুকে কফ জমতে পারে না। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মেনথল, যা ফুসফুসে আটকে যাওয়া মিউকাস দূর করে। পুদিনা কেবল নিঃশ্বাসকেই সতেজ করে না, পাশাপাশি এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য মুখে থাকা জীবাণু দূর করতে পারে। দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি দেয় পুদিনা। তবে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়, নয়তো শ্বাসনালিতে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
৮) ওজন কমাতে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পুদিনা খেলে মানুষ কম ক্ষুধার্ত বোধ করে। ফলে ওজন কমাতেও পুদিনাপাতা ভূমিকা রাখে। সকালে নানাভাবে পুদিনার পানি খাওয়া যায়। বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলো, পুদিনাপাতা কুচি কুচি করে কেটে ভিজিয়ে নিন পানিতে। চার–পাঁচ মিনিট পানিতে রাখুন। এরপর ফ্রিজে রেখে দিন সারা রাত। পরের দিন ফ্রিজ থেকে পানি বের করে সাধারণ তাপমাত্রায় আসতে দিন। সারা দিন ধরে অল্প অল্প করে ওই পানিতে চুমুক দিয়ে গলা ভিজিয়ে যান। চাইলে ওই পানিতে যোগ করতে পারেন সামান্য লেবুর রস।
৯) মুখের দুর্গন্ধ দূর করে: মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কাজে পুদিনাপাতা আদর্শ উপাদান। এর নির্যাস মুখের ভেতরের জীবাণু ধ্বংস করে, সুস্থ রাখে দাঁত ও মাড়ি।
১০) ত্বকের যত্নে: ত্বক টান টান রাখতেও পুদিনার ভূমিকা আছে। এই পাতায় আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করে।
১১) পেটের কার্যকারিতা: পুদিনায় এমন যৌগ রয়েছে যা প্রাণীদের জিআই ট্র্যাক্টের টিস্যুগুলোকে শিথিল করে। ফলে আপসেট স্টমাকের সমস্যা দূর হয়। গ্যাস, পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে পারে পুদিনা।
এইচএ