আমি তিন তিনবার হেফজখানায় এসে ফেরত গিয়েছি। সাহস করতে পারেনি এত ছোট ছেলেকে হেফজখানায় কিভাবে দিব। রাতের বেলায় যখন ঘুমাতে যেতাম অঝোরে কান্না করতাম ছেলের জন্য। আজ আমার সেই কান্নার সার্থকতা হয়েছে। আমার ছেলের মাথায় পাগড়ি পরিধানে মনে হচ্ছে বিজয়ের মাসে অন্য এক বিজয় অর্জন আমার।
তিনি আরো বলেন, একজন সন্তানকে কোরআনে হাফেজ হিসাবে তৈরি করতে হলে অবশ্যই মা-বাবার মনোবল শক্ত ও ধৈর্য ধরতে হবে। এসব কথা বলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পন্থিছিলা ইসলামিয়া দাখিল বিজ্ঞান মাদ্রাসার হিফজুল বিভাগের শিক্ষার্থী পাগড়ি পাওয়া আশফাক মুকিতের মা মরিয়ম বেগম। শুধু আশফাক মুকিত নয় একসাথে ২৮ জন কোরআনে হাফেজকে পাগড়ি প্রদান করে সম্মাননা দিয়েছেন হেফজ বিভাগ।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলবেলা উপজেলার পন্থিছিলা ইসলামিয়া দাখিল বিজ্ঞান মাদ্রাসার প্রাঙ্গণে পাগড়ি প্রদানকে কেন্দ্র করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠানে আসা অভিভাবকরা ছেলেদের এমন কৃতিত্বে উচ্ছ্বসিত হয়। অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা শহিদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ শহীদুল্লাহর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার অ্যাডক কমিটির সভাপতি এডভোকেট তৌফিক উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান ওয়ায়েজ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড কামিল এম এ মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা সেলিম জাহাঙ্গীর।
এ সময় তিনি বলেন, একজন কোরআনের হাফেজ পুরো পরিবারের জন্য আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকতের দরজা খুলে দেন। তিনি কোরআনের হেফাজতকারী, আল্লাহর বাণীর বাহক। এ কারণে কোরআনের হাফেজ যেমন মর্যাদাবান তেমনি তার মা-বাবাও পান অনন্য মর্যাদা। যে সন্তানের কণ্ঠে প্রতিদিন কোরআনের আয়াত উচ্চারিত হয়, সেই সন্তানের মা-বাবা কেয়ামতের দিন পাবেন নুরের মুকুট, আলোয় ভরে যাবে তাদের মুখমণ্ডল। পৃথিবীতে তারা যেমন কষ্ট করে সন্তানকে হাফেজ বানিয়েছেন, পরকালে তেমনই আল্লাহ তাদের সম্মানিত করবেন। হাদিসে এই মর্যাদা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, যা হাফেজদের মা-বাবার জন্য এক অনন্য সৌভাগ্যের ঘোষণা।
তিনি আরো বলেন, সীতাকুণ্ডের মধ্যে একসাথে ২৮ জন কোরআনে হাফেজকে পাগড়ি প্রদান এই প্রথম। আমি আশাবাদী, দেশে ও বিদেশে তারা বিভিন্ন কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে মা-বাবা ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান বয়ে আনবে।
অভিভাবক আক্তার হোসেন বলেন, যখন আমার ছেলেকে হেফজ খানায় দিচ্ছি তখন আমার ছেলে একেবারেই ছোট। রাতের বেলায় চিন্তায় ঘুম আসতো না। ছেলে কি খাচ্ছে কি পড়ছে।
এ সময় পাগড়ি পাওয়া হাফেজরা বলেন, আমাদের এই সফল কৃতিত্ব আমার মা-বাবা ও শিক্ষকদেরকে উৎসর্গ করলাম।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন,মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, নুর মুহাম্মদ,দেলোয়ার হোসাইন।
এসআর