চট্টগ্রাম নগরে ফের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের উদ্বেগজনক চিত্র সামনে এসেছে। দিনদুপুরে ব্যস্ত সড়কের পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনে ঢুকে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর জেরেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নগরজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
গত রবিবার বেলা আনুমানিক একটার দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর–অক্সিজেন সড়কের হামজারবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে কয়েক দিন পর গুলির ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, মো. মিজান ও জসিমের মালিকানাধীন নির্মাণাধীন একটি ভবনে শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন। এ সময় তিন যুবক ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন, যাঁদের মধ্যে দুজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। কোনো কথা না বলেই তারা পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। গুলির শব্দে শ্রমিকেরা আতঙ্কে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। পরে অস্ত্র হাতে নিয়েই সন্ত্রাসীরা ব্যস্ত সড়ক পার হয়ে এলাকা ত্যাগ করে।
পুলিশ জানায়, ওই নির্মাণাধীন ভবনের মালিকদের কাছে বিদেশে পলাতক কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর নাম ব্যবহার করে প্রায় ৮০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে চাপ সৃষ্টি করা হলেও চাঁদা না পাওয়ায় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণের মাধ্যমে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। ঘটনার পর থেকে হামজারবাগ ও আশপাশের এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একই এলাকায় আমির হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম নামের আরও দুই ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের ভয়ে তাঁদের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। হামলার শিকার মিজান ও জসিমও নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
দিনদুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি চালানোর দৃশ্য দেখে স্থানীয় একজন ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন। খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানা-পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও এর আগেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান সময়ের কন্ঠস্বর-কে বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তারা বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছিল। ভুক্তভোগীদের মামলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলেও তারা এখনও থানায় আসেননি। জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে, রবিবার নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার বালুছড়া উত্তর কুলগাঁও এলাকায় চাঁদা দাবির প্রতিবাদ করায় আরেকটি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। রাত আনুমানিক দশটার দিকে ছাত্রদলের এক নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। ভুক্তভোগী আহমেদ রেজা বায়েজিদ বোস্তামী থানা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। বর্তমানে তিনি যুবদলের পদপ্রত্যাশী বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
একই দিনে নগরের দুই থানায় চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনায় চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দিনদুপুরে ব্যস্ত সড়কের পাশে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি চালিয়ে সন্ত্রাসীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নগরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে দমন করা হোক।
ইখা