এইমাত্র
  • ৩২ ঘন্টা পর গর্ত থেকে উদ্ধার শিশু সাজিদকে মৃত ঘোষণা
  • গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে যাওয়া শিশুকে জীবিত উদ্ধার
  • গাজায় ঝড়-বৃষ্টিতে প্লাবিত বহু তাঁবু, ঝুঁকিতে বাস্তুচ্যুত লাখো ফিলিস্তিনি
  • নারীদের রান্নাঘরের সরঞ্জামকে অস্ত্র বানাতে বললেন মমতা
  • তানজানিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় ২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত
  • পদত্যাগ করতে চান রাষ্ট্রপতি
  • রাজধানীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা
  • শরীয়তপুরে আলোচিত ধর্ষণকান্ডের ঘটনায় মামলা, আটক ৪
  • তফসিলকে স্বাগত জানালেও নিরপেক্ষতার ঘাটতি দেখছেন পাটওয়ারী
  • তফসিল নিয়ে সন্তুষ্ট বিএনপি
  • আজ বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ | ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫
    আন্তর্জাতিক

    গাজায় ঝড়-বৃষ্টিতে প্লাবিত বহু তাঁবু, ঝুঁকিতে বাস্তুচ্যুত লাখো ফিলিস্তিনি

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৩ পিএম
    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৩ পিএম

    গাজায় ঝড়-বৃষ্টিতে প্লাবিত বহু তাঁবু, ঝুঁকিতে বাস্তুচ্যুত লাখো ফিলিস্তিনি

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৩ পিএম

    ইসরায়েলের আগ্রাসনে বিপর্যস্ত গাজায় নতুন দুর্যোগ বয়ে এনেছে শীতকালীন ঝড় বাইরন। চরম এই আবহাওয়ার জেরে প্রবল বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় উপত্যকাটির আশ্রয়শিবিরের বহু তাঁবু প্লাবিত হয়েছে। আটকা পড়েছে অনেক পরিবার। এমনকি বন্যার আশঙ্কায় তাঁবু ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন হাজারও ফিলিস্তিনি। অপ্রতুল আন্তর্জাতিক সহায়তার মধ্যে এই পরিস্থিতি ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও ভয়াবহ হয়ে সামনে এসেছে।

    সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, গাজার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতকালীন ঝড় ‘স্টর্ম বাইরন’ সেখানে নতুন দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। ঝড়ের দাপটে বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে বহু তাঁবু প্লাবিত হয়েছে। সেখান থেকে সাহায্যের আবেদন জানানোর পাশাপাশি অনেকে আবার শুকনো জায়গার খোঁজে তাঁবু ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন।

    বুধবার কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার পর্যন্ত বজ্রঝড়, প্রবল বৃষ্টি, দমকা হাওয়া আর শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এমন পরিস্থিতি দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে বিপর্যস্ত গাজায় আরও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কারণ সম্প্রতি সংঘাত কিছুটা বন্ধ হলে এখনও সেখানে লাখো মানুষ তাঁবু, আধাপাকা ঘর বা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে জীবনযাপন করছেন।

    মানবিক সহায়তাকর্মীরা বলছেন, তাঁবু, পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা মেরামতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশের ওপর ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা থাকায় গাজা এই দুর্যোগ সামাল দিতে প্রস্তুত নয়। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা ঢোকানোর জন্য নেতানিয়াহু সরকারকে চাপ দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

    দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, আশ্রয়শিবির থেকে তারা ইতোমধ্যে ‘তাঁবু প্লাবিত’ ও ‘ভেতরে আটকে পড়া’ পরিবারের বিপদসংকেত পেয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ‘প্রয়োজনীয় সম্পদ আর সরঞ্জামের ঘাটতি সত্ত্বেও আমাদের দল মানুষজনকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।’

    সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এবং আল জাজিরার যাচাই করা ভিডিওতে দেখা গেছে, প্লাবন ঠেকাতে লোকজন তাঁবুর চারপাশে নালা কেটে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন।

    জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় দপ্তর ওসিএইচএ জানায়, ৭৬১টি আশ্রয়স্থলে থাকা প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার মানুষ সবচেয়ে বেশি প্লাবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। আগের ঝড়েও বহু স্থানে পয়োনিষ্কাশনের নোংরা পানি আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছিল, তাঁবু ভেসে গিয়েছিল এবং মানুষকে বাধ্য হয়ে পালাতে হয়েছিল।

    গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, একটু ভারী বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। উন্মুক্ত ও অনাবাদি জমিতে তৈরি এসব অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খুব সহজেই প্লাবিত হয়। তাঁবুগুলোর অবস্থাও বেশ নাজুক, ছেঁড়া বা দুর্বল, যা প্রবল বাতাস-বৃষ্টির সামনে প্রায় কোনও সুরক্ষাই দেয় না।

    প্যালেস্টিনিয়ান এনজিও নেটওয়ার্কের পরিচালক আমজাদ শাওয়া বলেন, ইসরায়েল তাঁবু ও জরুরি যন্ত্রপাতি ঢুকতে না দেয়ায় গাজা পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। তার ভাষায়, ‘যদি সরঞ্জাম ঢুকতে দিত, পরিস্থিতি এমন হতো না’। তিনি জানান, সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন ছিল ৩ লাখ তাঁবুর; অথচ ইসরায়েল ঢুকতে দিয়েছে মাত্র ৪০ হাজার। পয়োনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ লাইন মেরামতের সরঞ্জামও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে।

    অক্সফামের পরামর্শক ক্রিস ম্যাকইনটশ বলেন, গাজার মানুষ ‘ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি’ হতে চলেছে। তার অভিযোগ, ইসরায়েলের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে গাজায় যথাযথ আশ্রয় ব্যবস্থা তৈরির সুযোগ নেই এবং টানা কয়েক মাস ধরে নতুন তাঁবু এখানে ঢুকতেও দেয়া হয়নি। এর ফলে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ তাঁবুর মধ্যে বাস করছে, আর ঝড়-বৃষ্টি হলে অনেকেই ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা ভাঙা ভবনগুলোতেই আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন।

    জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে নবজাতকসহ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে নতুন একটি আশ্রয়স্থলে প্রায় ২০০ পরিবার যেতে পারে, কারণ তারা আগে যেখানে অবস্থান করছিলেন সেখানে প্লাবনের তীব্র ঝুঁকি আছে বলে তারা জানিয়েছেন।

    গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতা বলেন, স্টর্ম বাইরনের প্রভাবে প্রায় ২ লাখ ৮৮ হাজার পরিবার এখন কোনও স্থায়ী আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছেন। তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরির আহ্বান জানান।

    জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ গাজা ইস্যুতে বৈশ্বিক নীরবতার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘গাজার মানুষকে একা ফেলে রাখা হয়েছে, তারা শীতের এই ঝড়ে ঠাণ্ডায় কাঁপছে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমরা এত নিষ্ঠুর হলাম কীভাবে?’

    এবি

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…